মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় পিয়াসা-মৌসহ ৫০ জন মডেলকে দিয়ে ডিজে পার্টির নামে বসানো হতো মাদকের আসর। সেই সঙ্গে এসব মডেলদের দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হতো। রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ও বিদেশে পার্টিতে আসা লোকজনের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও করে ব্ল্যাকমেল করে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের অর্থ।
রাজধানীর কুর্মিটোলার র্যাব সদর দপ্তরে বুধবার (৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এর আগে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকা থেকে মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) রাতে অস্ত্র ও মাদকসহ শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান (৩১) ও তার সহযোগী মাসুদুল ইসলাম ওরফে জিসানকে (৩৯) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। গ্রেপ্তারকালে তাদের কাছ থেকে ১টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৬ রাউন্ড গোলাবারুদ, ইয়াবা ১৩ হাজার ৩০০ পিস, একটি বিলাসবহুল ফেরারি মডেলের গাড়ি, শিশার সরঞ্জামাদি,২টি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই ও এটিএম কার্ড, পাসপোর্ট এবং ভারতীয় জাল মুদ্রা ৪৯ হাজার ৫০০ রুপি জব্দ করা হয়।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। এই চক্রের সদস্য প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। তাঁরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকা বিশেষ করে গুলশান, বারিধারা, বনানীসহ বিভিন্ন এলাকায় পার্টি বা ডিজে পার্টির নামে মাদক সেবনসহ নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করে থাকে। পার্টিতে তারা অংশগ্রহণকারীদের নিকট হতে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকে। অংশগ্রহণকারীরা সাধারণত উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশগ্রহণ করত।
কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রটি বিদেশেও প্লেজার ট্রিপের আয়োজন করত। একইভাবে উচ্চবিত্তের প্রবাসীদের জন্যও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টি আয়োজন করা হতো। সেখানে আগত উচ্চবিত্ত ক্লায়েন্টদের গোপন ছবি ধারণ করে হাতিয়ে নেওয়া হতো মোটা অঙ্কের টাকা। এ চক্রটির মূল হোতা মিশু হাসান।
কমান্ডার আরো বলেন, এসব অনৈতিক কাজে কথিত মডেল পিয়াসা-মৌসহ দেশি-বিদেশি ৫০ জন ক্লায়েন্টকে ব্যবহার করা হতো। ওই মডেলদের নাম পরিচয় জানা গেছে। তাদের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ক্লায়েন্টদের চাহিদা ও পছন্দের গুরুত্ব দিয়ে পার্টির আয়োজন করা হতো। এই অবৈধ আয়ের অর্থ নামে বেনামে বিভিন্ন ব্যবসায় (গাড়ির ব্যবসা, আমদানি ও গরুর ফার্মে) বিনিয়োগ করেছে মিশু হাসান ও জিসান। এই ব্যবসায় তাদের গ্রুপের সদস্যদের অবৈধ আয়ের বিনিয়োগও রয়েছে। এসব ব্যবসায় অবৈধ অর্থের জোগানদাতাদের সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে। তাদের ব্যবসায়িক কাঠামোতে অস্বচ্ছতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান বাংলাদেশে নামীদামি ব্রান্ডের বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবসা করে। সে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ছলচাতুরীর আশ্রয় নিত বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে। সে নিজেও দামি ব্রান্ডের গাড়ি ব্যবহার করত। তাঁর ব্যক্তিগত ২টি রেঞ্চ রোভার, এ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন ও ফেরারীসহ ৫টি গাড়ি রয়েছে। সে অত্যন্ত সুকৌশলে গাড়ির ট্যাক্স জালিয়াতি করেছে বলে প্রমাণ মিলেছে।
অপরদিকে জিসানের এলাকায় একটি গরুর ফার্ম রয়েছে। যেখানে অবৈধ অনুমোদিত ব্রামান গরু লালন পালন করে। আটক শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান ইতিপূর্বে বিভিন্ন মামলায় তিনবার গ্রেপ্তার করা হয়। তার নামে বেশ কয়েকটি মামলাও রয়েছে। তার সঙ্গে বেশ কয়েকজন চিহ্নিত অপরাধীদের যোগাযোগ রয়েছে।
কোন ধরনের মডেলদের এসব অনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হতো জানতে চাইলে র্যাবের মুখ্যপাত্র বলেন, ‘মধ্যবিত্ত ও যাদের সঙ্গে ব্যবসা ও যোগাযোগ রয়েছে তাদের এবং বিভিন্ন শ্রেণির মডেলকে দিয়ে এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হতো।’ তাদের ক্লায়েন্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘যাদের সঙ্গে মিশু ও জিসানের ব্যবসা ও যোগাযোগ রয়েছে তাদেরই ক্লায়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হতো।
মিশুর গাড়ির ব্যবসার আয় প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খন্দকার আল মঈন বলেন, অবৈধভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে গাড়ি করে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করত মিশু।
মিশু হাসান ও জিসানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে, মাদক আইনে, ভারতীয় জাল মুদ্রা ও অননুমোদিত গাড়ি আমদানি ও ব্যবহারে বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ আলাদা আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
Leave a Reply